ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে নিজেদের জয়ী ভাবছে অনেক দল। অথচ এসব দলের এজেন্ডায় রাষ্ট্র সংস্কারের চিন্তা-চেতনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিটির প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নতুন বাংলাদেশ গঠন নিয়ে যে সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সবাই এখন আশাবাদী। তবে তুমুল এ আন্দোলনের পর নিজেদের যারা জয়ী ভাবছেন, তাদের অনেকের এজেন্ডার মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের চিন্তা-চেতনাটাও নেই। তাদের মধ্যে এখনো বিভিন্নভাবে বৈষম্য জিইয়ে রাখা বা প্রতিষ্ঠিত করার এজেন্ডা রয়েছে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) ‘নাগরিক সমাজ: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক জাতীয় পরামর্শ সভায় সম্মানিত অথিতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে এ সভার আয়োজন করা হয়।
দেশে কাজ করা তিন শতাধিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, নাগরিক সংগঠন ও প্ল্যাটফর্ম, নারী আন্দোলন, মানবাধিকার সংগঠন, সামাজিক উদ্যোক্তা এবং গবেষকদের ঐক্যজোট সিএসও অ্যালায়েন্স এ পরামর্শ সভার আয়োজন করে।
বিগত সরকার এনজিওগুলোকে প্রচণ্ড চাপে রেখেছিল অভিযোগ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশি-বিদেশি যে উন্নয়ন সংস্থাগুলো, তারা মূলত সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অনিয়ম-দুর্নীতি রুখতে কাজ করে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করে। অথচ বিগত ১৫ বছর এনজিও এবং সিএসও খাতের ওপর প্রচণ্ড ধরনের চাপ ছিল। হয়রানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে ক্ষমতার রাজনীতি, সেখানে এখনো যে সংকীর্ণতা; তাতে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ করতে হয়। যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারাই আমাদের চরম শত্রু ভেবেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে অসহযোগিতা করেছে। আবার হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলাও করেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, যখন আবার সেই দল ক্ষমতার বাইরে থেকেছে; বিরোধীদলে গেছে, তখন আমাদের কর্মকাণ্ডগুলোকে সাধুবাদ জানিয়েছে। গত ১৫ বছরের যে ইতিহাস, সেখানেও কিন্তু ধারাবাহিক সেই প্রক্রিয়াই চলেছে। তাদের এমন কঠোরতা ও উদারতার কারণ হলো- একপক্ষের ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে এবং অন্যপক্ষকে ক্ষমতায় যেতে হবে।
‘অথচ অনিয়ম-দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সুশাসনের ঘাটতির যে চিত্র, তা তুলে ধরে এনজিও এবং সিএসও খাতের সংস্থাগুলো মূলত সরকারকে সঠিক কাজটি করতে সহায়তা করে থাকে। সেটি কিন্তু বিগত সরকারগুলো অনুধাবন করতে পারেনি। ফলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে’ যোগ করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বিদেশি উন্নয়ন সংস্থাগুলো চাপে রাখতে সরকার আইনেও পরিবর্তন এনেছিল উল্লেখ করে টিআইবির প্রধান বলেন, বিদেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে চাপে রাখার জন্য তারা আইনে নানান পরিবর্তনও এনেছিল। ফরেন ডোনেশন্স (স্বেচ্ছাসেবক অ্যাক্টিভিটিস) রেগুলেশন অধ্যাদেশ যেটি রয়েছে, ২০১৬ সালে তাতে ৪৩নং ধারা যুক্ত করা হয়। সেখানে ১৪ নম্বর উপধারায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি দেশের সংবিধান এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক ও অশালীন কোনো মন্তব্য করেন, তাহলে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এর মাধ্যমে সংস্থাগুলোকে সমালোচনা, সুশাসন ও মানবাধিকার কথা বলার ক্ষেত্রে বাধার দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে।