যশোরের নবাগত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম যোগদান করেই ‘সিনেমাটিক’ অভিযান চালিয়েছেন। সাধারণ বেশে নিজের পরিচয় গোপন রেখে বাইসাইকেল চালিয়ে ঘুরেছেন পুলিশের বিভিন্ন দপ্তর ও থানায়। তার এই ছদ্মবেশি অভিযান যশোরবাসীকে যেমন অবাক করে দিয়েছেন, তেমনি তিনি নিজেও বিস্মিত হয়েছেন। তবে এসময় তিনি কোন কোন দপ্তরে কর্মকর্তাদের কার্যক্রমের সন্তুষ্ট হয়েছেন। আবার কোন দপ্তরে কর্মকর্তা না পেয়ে ও সেখানকার কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট হয়েছেন।
বুধবার (১০ জুলাই) বিকেলে যশোরের নবাগত পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাসুদ আলমের মতবিনিময় সভায়ও বিষয়টি উঠে এসেছে। মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, চাকরিকে রুটি-রুজির পাশাপাশি আমার ইবাদত মনে করি। এই কাজের মাধ্যমেই আমি জান্নাতে যেতে চাই।’
এর আগে সোমবার নবাগত পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাসুদ আলম যশোরে যোগদানের পরদিন ভোরে পুলিশ সুপার যশোরে যোগদান করেই নিজে বাইসাইকেল চালিয়ে জেলা প্রশাসকের বাংলোয় যান। বাংলোর গার্ড তাকে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া ঢুকতে দেননি। পরে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন জেল রোড ট্রাফিক অফিসে। এখানে ফটকে কাউকে না পেয়ে তিনি চলে যান চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়িতে। সেখানে পুলিশ ফাঁড়ির গেট দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে গেট ঝাকাঝাকি করেন।
কিন্তু কেউ গেট খুলতে আসেননি। এরপর তিনি যান কোতোয়ালি মডেল থানায়। সেখানে তিনি পরিচয় গোপন রেখে কোতোয়ালি মডেল থানায় ডিউটি অফিসারের কক্ষে যান। মোবাইল হারিয়ে গেছে জানিয়ে ডিউটি অফিসারের কাছে জিডি করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে ডিউটি অফিসার একজনকে দেখিয়ে দিয়ে বলেন, জিডি করতে হলে ৫০০ টাকা লাগবে। টাকা না দেয়ায় তিনি জিডি করতে পারেননি।
এরপর তিনি চলে যান পুলিশ লাইনে। গেটে কর্মরত কনস্টেবল তাকে দাঁড় করান এবং ব্যারাকে কার সঙ্গে দেখা করবেন তা জানতে চান। তখন ছদ্মবেশি পুলিশ সুপার ওই কনস্টেবলকে বলেন, ব্যারাকে কামাল নামে এক বন্ধু আছে। তার সঙ্গে দেখা করতে চাই। তখন কনস্টেবল গার্ড তাকে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দেন। কনস্টেবলদের ব্যারাকের তিনতলায় গিয়ে তিনি সবার সাথে খিচুড়ি খান এবং অনেকের সঙ্গে আলাপ করেন।
বুধবার বিকেলে যশোর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এই ছদ্মবেশি অভিযানের বিষয়টিও উঠে আসে। অভিযানের বিষয়টি স্বীকারও করেন তিনি। যশোরের নবাগত পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাসুদ আলম বলেছেন, চাকরিতে রুটি-রুজির পাশাপাশি আমার ইবাদত মনে করি। এই কাজের মাধ্যমেই আমি জান্নাতে যেতে চাই।’
মতবিনিময়কালে তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকরা হলেন সমাজের আয়না। জাতির বিবেক। পুলিশ ও সাংবাদিক একে অপরের সহায়ক। আমরা যশোরকে শান্তি ও স্বস্তির জেলায় পরিণত করতে পারি, যদি আপনারা আমাদের সহায়তা করেন। সাংবাদিকদের সহযোগিতা পেলে যশোরকে মাদক, সন্ত্রাস ও কিশোর গ্যাং মুক্ত করা সম্ভব।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে নবাগত পুলিশ সুপার আরও বলেন, সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের সঙ্গে থাকতে চাই। আপনার সত্য তথ্য দিবেন যাচাই করে শতভাগ পদক্ষেপ নেব। আমি তদবির করে পোস্টিং নিই নাই। আমার বদলির ভয় নেই। বদলির অর্ডার হলে চলে যাবো। তবে আমি যখন এসেছি, কাজ করতে চাই। আমাদের কাছে সন্ত্রাসীদের যে তালিকা আসবে, আমরা সেই তালিকা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে কাজ করবো। সন্ত্রাসীদের কার রঙ কালো, কার রঙ সাদা সেটি বিবেচ্য হবে না।