গভীর রাতে কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে সাভারের বিরুলিয়ায় বোট ক্লাবে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। ওই ক্লাবের বিনোদন ও সংস্কৃতিবিষয়ক নির্বাহী কমিটির সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদ এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ তাঁর।
পরীমনির ভাষ্যমতে, ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুটি গাড়িতে করে উত্তরার উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন তাঁরা। পথে অমি নামের তাঁর সঙ্গীদের একজন দুই মিনিটের কাজের কথা বলে তাঁদের বোট ক্লাবে নিয়ে যান।
পরীমনির সঙ্গে এই দলে তাঁর কস্টিউম ডিজাইনার জিমিও ছিলেন। ক্লাবে ভেতরে যখন পরীমনির ওপর নির্যাতন চালানো হয়, সে সময় প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছিলেন জিমি। ওই জিমির মাধ্যমেই বছর দুয়েক আগে অমির সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল পরীমনির।
আসামিরা গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ঢাকা বোট ক্লাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাসির ইউ মাহমুদকে (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) ক্লাবের নির্বাহী কমিটি থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখানেই অমির পুরো নাম পাওয়া যায়। তিনি তুহিন সিদ্দিকী অমি। তিনিও এই ক্লাবের সদস্য। তাঁর সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনি এবং নাসির ইউ মাহমুদকে কেন্দ্র করে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরীমনির মামলায় আসামিদের মধ্যে শুধু নাসির ও অমির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদের দেখলে চিনতে পারবেন বললেও তাঁদের নাম বলতে পারেননি পরীমনি।
ঢাকা বোট ক্লাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য নাসির ও অমির পাশাপাশি শাহ এস আলম নামের আরেকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এই তিনজনেরই সাধারণ সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। তবে শাহ আলম সম্পর্কে এখনো পুলিশের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গতকাল রোববার এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি বোট ক্লাবে তাঁকে মদ্যপানের জন্য জোরাজুরির ঘটনায় নাসিরের সঙ্গে আরেকজন ‘বয়স্ক লোকের’ কথা বলেছিলেন। তিনিই শাহ আলম কি না, সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পরীমনির ঘটনা তদন্তে একটি কমিটিও করেছে ঢাকা বোট ক্লাব। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ঠিকাদার থেকে আবাসন ব্যবসায়ী নাসির
পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টার প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন কুঞ্জ ডেভেলপারস লিমিটেড নামের একটি আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ ছাড়া মাহমুদ বিল্ডার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড এবং ফোর স্টার রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। নাসির তিন দফায় উত্তরা ক্লাবের সভাপতি ছিলেন।
তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, নাসির উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন তিনি। আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।