অনেকেই মনে করেন, জরায়ু শুধুমাত্র সন্তান জন্মদানের কাজে লাগে। এ ধারণা সঠিক নয়। জীবনের কয়েকটি পর্যায়ে জরায়ুর বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে মাসিকের সময়, সহবাসের সময়, গর্ভকালীন সময় এবং মেনোপজের আগে ও পরে।
জরায়ু পরিচর্যার আগে এ সমস্যা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তা না হলে ভুল পদক্ষেপে জটিলতা বাড়তে পারে। এখন প্রশ্ন হতে পারে, সাধারণত জরায়ুতে সমস্যা হলে এর উপসর্গগুলো কেমন হয়? খুব সহজেই এগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব।
মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাব, তলপেটে ব্যথা, নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও মাসিক না হওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত সাদাস্রাব, পুঁজযুক্ত ঋতুস্রাব, সহবাসের পর রক্ত বের হওয়া, মাসিক ছাড়া রক্তস্রাব ইত্যাদি। এ ধরনের কোনো উপসর্গের সাথে জ্বর থাকলে কিংবা পেটব্যথা, পেটের যে কোনো সমস্যা বা অতিরিক্ত গ্যাস, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দেখা দিলেও স্ত্রীরোগ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কেন না এ ধরনের সমস্যায় জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের রোগ হতে পারে।
তবে সাবধান হওয়ার জন্য বা কিছু লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে নিন্মাঙ্গের চারপাশে চাপ লাগা, ঘনঘন মূত্রত্যাগ, গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, হালকা খাবার খেলেও মনে হয় পেট ভর্তি, পেটে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা, পেটে অতিরিক্ত ব্যথা, পেট ফুলে থাকা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, ক্ষুধা কম, ওজন কম বা বেশি হওয়া, যৌন মিলনে ব্যথা লাগা, অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং মেনোপজের পরও এ ধরনের কোনো সমস্যা থাকলে দ্রুত চিকিৎসকরে শরণাপন্ন হতে হবে।
সাধারণত অল্প বয়সে বিয়ে, অল্প বয়সে সন্তান হওয়া, ঘনঘন সন্তান ধারণ, আগে জরায়ুর কোনো সমস্যা, বহুগামিতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, ইনফেকশন, তামাক গ্রহণ বা ধুমপান, বংশগত ইত্যাদি কারণেও জরায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা জরায়ুতে নানা রোগ হতে পারে।
দেশের প্রত্যেক জেলা ও সদর হাসপাতালে জরায়ু এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে করা হয়। সেখানে এ-সংক্রান্ত চিকিৎসাও রয়েছে। এজন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক ডা. মালিহা রশীদ
স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ট, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল