নেট দুনিয়ায় ভাইরাল নারী টিকটকারের ভয়ংকর ‘রূপ’

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পাশবিক নির্যাতন চালাতেন ১৩ বছর বয়সি কল্পনা নামে এক গৃহকর্মীর ওপর। নির্মম নির্যাতনে এই গৃহকর্মীর ভেঙে দেওয়া হয়েছে ৪টি দাঁত। মদ্যপ হয়ে কখনো রড, কখনো লাঠি দিয়ে পেটানো আবার কখনো ছেঁকা দেওয়া হতো শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। বলছি নারী টিকটকার দিনাত জাহান আদরের কথা। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে তার ফলোয়ার সংখ্যাও অনেক। রূপ লাবণ্যের প্রশংসায় মজে থাকতেন ভক্তরা। তবে এ ঘটনা ভাইরাল হওয়ায় বেরিয়ে এসেছে তার ভয়ংকর রূপ। এখন তার সমালোচনায় মত্ত পুরো নেটদুনিয়া।

সম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় ঐ কিশোরীকে। সারা শরীরে ইনফেকশনে ছড়িয়ে পড়ায় পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার ক্ষত দেখে আঁতকে উঠেছেন চিকিৎসকরাও।

পৈশাচিক নির্যাতন চালানো গৃহকর্ত্রী দিনাত জাহান আদরকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য জানা যায়।

রোববার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় গ্রেফতার জিনাত জাহান আদরের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে ভাটারা থানা পুলিশ। পরে আদালত তার এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সরেজমিন ঢামেক হাসপাতালে দেখা যায়, চিকিৎসাধীন কল্পনার পায়ের নখ থেকে মাথার চুল, কোথাও বাদ নেই নিপীড়নের চিহ্নের। রেহাই পায়নি দাঁতগুলোও। ভেঙে ফেলা হয়েছে কাঠের টুকরো দিয়ে আঘাতে আঘাতে।

কল্পনা জানায়, দু-এক দিন নয়; দীর্ঘ ৫ বছর ধরে চলে তার ওপর এ পাশবিক নির্যাতন। রড দিয়ে পেটানো ছিল যেন দৈনন্দিন কাজ। সবশেষ দুদিন আগে হেয়ার স্ট্রেইটনার দিয়ে ছেঁকা দেয়া হয় মুখে। কাজের ভুল ধরে, কখনও মদ্যপ হয়ে গৃহকর্ত্রী দিনাত জাহান আদর তার ওপর চালাতো এই পৈশাচিক বর্বরতা। চিকিৎসার জন্যও কখনও যেতে দেওয়া হতো না বাসার বাইরে।

গৃহকর্মী কল্পনাকে ৫ বছর ধরে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে টিকটকার দিনাতকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে

শনিবার রাতে এক গণমাধ্যমকর্মীর খবরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই-ব্লকের, ৩ নম্বর রোডের ৪৬৬ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে মুমূর্ষু কল্পনাকে উদ্ধার করে ভাটারা থানা পুলিশ। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।

জানা যায়, অভিযুক্ত দিনাত জাহান আদর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। বর্তমানে কিছুই করেন না। বাসায় এক ভাই ও বন্ধুরা আসেন মাঝে মাঝে। বাসার কেয়ারটেকার ও প্রতিবেশীরা বলছেন, নির্যাতনের বিষয়ে তারা কিছুই টের পাননি।

কল্পনার মা আফিয়া বেগম বলেন, মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতনে পাঁচ বছর আগে কল্পনাকে দিনাত জাহানের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতে দিই। বহুবার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি, কিন্তু দেখা করতে দেয়নি। কয়েক মাস পরপর ফোনে কথা বলতে দিলেও কল্পনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকত গৃহকর্ত্রী দিনাত জাহান।

কল্পনার শরীরের এত জখম দেখে আঁতকে ওঠেন খোদ চিকিৎসকরাও। তারা বলছেন, শরীরের জখমে ইনফেকশনের সঙ্গে রয়েছে ট্রমাও। সেরে উঠতে কল্পনার প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা।

এদিন দুপুরে কল্পনাকে দেখতে ঢাকা মেডিকেলে আসেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিন বলেন, এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দেশের আনুমানিক ৫ লাখ শিশু শ্রমিক ও গৃহকর্মীদের প্রয়োজন নিরাপত্তায় আইন। এ জন্য একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দিনাতের এই কাণ্ডে চলছে তুমুল সমালোচনা। বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর অনেকে কমেন্ট করে বলছেন, “ওরা ফিল্টারেই সুন্দর বাস্তবে গু”। আরেক লিখেছেন, “এই মহিলা মানসিকভাবে অসুস্থ না হলে এভাবে একটা বাচ্চা মেয়েকে কেউ মারে না। মেয়েটার কান্নার শব্দেও ওর মায়া হয় নাই, সেই শব্দেও আরো আনন্দ পেয়েছে।”