রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে যা বলছে বিএনপি ও জামায়াত

শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের মন্তব্যের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে তার বিদায়ের দাবি উঠেছে। তবে আইন ও সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে সরানোর সুযোগ আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আন্দোলনকারীরা উল্লেখ করেছেন যে, গণঅভ্যুত্থানের পর ‘আইন ও সংবিধানের’ গুরুত্ব কমে গেছে, ফলে রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে অন্য কাউকে পদে বসানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রপতির তীব্র সমালোচনা করলেও তার পদত্যাগের দাবিতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি দলের মধ্যে সিনিয়র নেতাদের বিচ্ছিন্ন মন্তব্য না করার পরামর্শ দিয়েছে, আর জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি অসত্য বক্তব্যের কারণে পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন। তবে উভয় দলের নেতাদের কাছে বিবিসির প্রশ্ন ছিল, তারা রাষ্ট্রপতি সরে যাক এটি চান কি না।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য প্রকাশের পরপরই তীব্র শোরগোল ও আইন উপদেষ্টার কঠোর সমালোচনার পরেও রাজনৈতিক দলগুলো- বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘শিক্ষাজীবনে ছাত্রলীগ করা রাষ্ট্রপতি পলাতক শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছেন’।

তবে এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিবিসির পক্ষ থেকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির দুই জন সদস্যের মতামত নেওয়া হলেও পরে তারা দুজনই ফোন করে জানান যে, তাদের এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করার জন্য দলীয় হাইকমান্ড থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তবে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে আরও কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনা করে যে ধারণা পাওয়া গেছে, তাতে বিএনপি আসলে বোঝার চেষ্টা করছে যে রাষ্ট্রপতি এ মন্তব্যের ক্ষেত্রে ‘কতটা সিরিয়াস’ ছিলেন। অর্থাৎ তিনি কী তথ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন নাকি সরকারকে কোনো ধরনের সংকটে ফেলার চিন্তা থেকে এমন মন্তব্য করেছেন।

আবার দলের একটি অংশ বোঝার চেষ্টা করছে রাষ্ট্রপতির ওই মন্তব্য ‘অন্য কারো প্ররোচনায় হয়েছে কি না’। তবে ‘অন্য কারও’ বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে এমন প্রশ্নের কোন সরাসরি উত্তর মেলেনি।

যদিও দলটির কোনো কোনো নেতা মনে করেন সরকারের মধ্যেই একটি অংশ আছে যারা ‘দ্রুত গণতন্ত্রে উত্তরণ বা রাজনৈতিক সরকার আসার পথ সুগম’ করতে অনুৎসাহী। রাষ্ট্রপতির মন্তব্যের ক্ষেত্রে তাদের কোনো ভূমিকা আছে কি-না তা নিয়েও আলোচনা আছে দলের মধ্যে।

‘চাইলে তো রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে যে কাউকে রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সেটি গণতন্ত্রে উত্তরণে কোনো ভূমিকা রাখবে কি-না সেদিকে আমাদের দৃষ্টি থাকবে। এমন কিছু করতে দেওয়া যাবে না যেটি দেশকে বিরাজনীতিকরণের দিকে নিয়ে যেতে পারে,’ বলছিলেন দলটির একজন সহ-সভাপতি। তিনি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন অভ্যুত্থানের পর বিদায়ী সরকারের কারোরই বহাল থাকা উচিত নয় বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু দলের দিক থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র তিনি পেয়েছেন আর পরে সাংবাদিকদের বলছেন পাননি।

‘এর অর্থ হলো এখন তিনি মিথ্যা বলছেন, যা শপথ ভঙ্গের নামান্তর। এর মাধ্যমে তিনি ওই পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তবে জামায়াতে ইসলামী বর্তমান রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ কিংবা অপসারণ চায় কি-না এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি তিনি।