ছোট্ট মুনতাহার শোকে কাঁদছে সারা দেশ

সিলেটের কানাইঘাটের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন; বয়স ছয় বছর। ফুটফুটে প্রাণচাঞ্চল্য মেয়েটি ছিলো পুরো পরিবারের আদরের। তবে বাসার সবার অগোচরে বাড়ির উঠান থেকেই নিখোঁজ হয় শিশুটি। তার নিখোঁজের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক)। ছোট্ট মুনতাহার খোঁজ পেতে তৎপর হয়ে পড়ে দেশ-বিদেশের সবাই। মুনতাহাকে ফিরে পেতে গেলো ৭ দিন ধরেই অধীর অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনরা। কিন্তু সে ফিরলো ঠিকই, তবে জীবিত নয়; লাশ হয়ে।

রোববার (১০ নভেম্বর) নিখোঁজ শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের মরদেহ দেখতে বাড়িতে ভিড় করেন আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ। বিলাপ করছেন বাবা-মা। ফুটফুটে ওই শিশুটি হত্যায় শুধু স্বজনরা নয়, কাঁদছে দেশবাসীও।

জানা যায়, গেলো ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরে মুনতাহা। এরপর পাশের বাড়িতে শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু এরপর আর বাড়ি ফেরেনি ছোট্ট মুনতাহা। প্রিয়মুখটির সন্ধান পেতে স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও পায়নি। অবশেষে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন তার বাবা। শিশুটির সন্ধান পেতে জোর তৎপরতা চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। রোববার ভোর ৪টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত শিশু মুনতাহা কানাইঘাট সদর উপজেলার বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।

স্থানীয়রা জানান, খাস জমিতে বসবাস করেন ভিক্ষুক আলিফজান। প্রতিবেশী শিশু মুনতাহার পরিবারের সঙ্গে সহানুভূতির সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো আলিফজানের পরিবারের। মুনতাহাকে পড়াতো আলিফজানের মেয়ে মারজিয়া। গত ৩ নভেম্বর শিশু মুনতাহা নিখোঁজের পর বিভিন্ন নম্বর থেকে পরিবারের কাছে চাওয়া হয় টাকা। ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে আসে হুমকিও। ঘটনাটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত আলিফজানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগও করেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

আরও জানা যায়, রোববার রাতে সন্দেহজনকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশু মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়াকে থানায় নেয় পুলিশ। এ সময় তার আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে মার্জিয়ার বাড়িতে মুনতাহার সন্ধানে তল্লাশি চালান স্থানীয়রা। রাত সাড়ে ৩টার দিকে মার্জিয়ার বাড়ির আশপাশে তল্লাশি চালানোর এক পর্যায়ে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখেন। এ সময় তাকে আটকাতে চাইলে তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয়রা গিয়ে কাদামাটি মাখা মুনতাহার মরদেহ দেখতে পান। পরে মার্জিয়ার মাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।

সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।