দেশে ফাইভ-জি সেবা চালু করতে নিজস্ব ফাইবার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চায় মোবাইল অপারেটররা। এর বিপক্ষে ফাইবার সেবাদাতারা। মোবাইল অপারেটরদের যুক্তি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ ফাইবার ঝুলন্ত, যা অনেক বেশি মাত্রায় দুর্ঘটনাপ্রবণ এবং ব্যয়বহুল। যদিও এসব যুক্তি মানতে নারাজ বেসরকারি ফাইবার প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা বলছে, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসা ও বিনিয়োগ। তবে সবকিছু বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের মতো কনটেন্ট দেখতে ৩ থেকে ৫ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন হয়। ছবি: সময় সংবাদ
ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের মতো কনটেন্ট দেখতে ৩ থেকে ৫ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন হয়। ছবি: সময় সংবাদ
শুভ খান
২ মিনিটে পড়ুন
মোবাইলে ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের মতো কন্টেন্ট দেখতে ৩ থেকে ৫ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন হয়। গ্রাহকের অবস্থান ফাইবারযুক্ত টাওয়ারে হলে সহজেই তা পেয়ে যান। তবে ফাইবার না থাকলে মাইক্রোওয়েভ দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইথ সব সময় মেলে না। এতে খারাপ হয় সেবার মান।
নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিতে দেশজুড়ে সরকারি-বেসরকারি ছয় প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৭২ হাজার কিলোমিটার ফাইবার নেটওয়ার্ক রয়েছে। অথচ ৪৫ হাজার মোবাইল টাওয়ারের মধ্যে ফাইবারে যুক্ত মাত্র ১৫ হাজার টাওয়ার অর্থাৎ প্রায় ২৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন,
ফাইবার দিয়ে সার্ভিসটা নিতে পারলে এবং এটার শতভাগ আন্ডারগ্রাউন্ড থাকলে আমরা নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক পেতাম। তখন আর এই কথা বলার সুযোগ থাকতো না যে, ফাইবার কেটে যাওয়ায় নেটওয়ার্ক বন্ধ।
আরও পড়ুন: নতুন ভার্সনের মোবাইল আর চমকপ্রদ সব গেজেটে ক্রেতাদের আগ্রহ!
ফাইবার ব্যবহারে মোবাইল অপারেটরদের অনীহা কেন? তথ্য বলছে, সামিট ও ফাইবার অ্যাট হোমের ১ লাখ ২২ হাজার কিলোমিটার নেটওয়ার্কের মধ্যে ৮০ হাজার কিলোমিটারই ঝুলন্ত ফাইবার। যেকোনো মুহূর্তে কাটা পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। ডিডব্লিউডিএম মেশিন আমদানির অনুমতি না থাকায় সরকারি ফাইবারও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না মোবাইল অপারেটররা। সরকারি ফাইবার প্রতিমিটারে ভাড়া ৫ থেকে ৭ টাকা। অথচ বেসরকারিতে ক্যাপাসিটিভিত্তিক ব্যান্ডউইথ ট্রান্সমিশন খরচ ১৭ থেকে ২০ টাকা। আছে ডার্ক ফাইবার ভাড়া না পাওয়ার অভিযোগও। এমন প্রেক্ষাপটে নিরবচ্ছিন্ন ফাইভ-জি সেবা দিতে অন্তত ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ টাওয়ারে ফাইবার সংযোগ থাকা প্রয়োজন। তাই গাইডলাইনে সংশোধনী এনে ফাইবার নেটওয়ার্ক তৈরির সুযোগ চায় মোবাইল অপারেটররা।
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের অফিসার সাহেদ আলম বলেন,
আমাদের ফাইভ-জি সেবার ভবিষ্যৎ গাছের ডালে অথবা বিদ্যুতের খুঁটিতেই ঝুলে আছে। ফাইবার নেটওয়ার্ক সাজাতে না পারলে ফোর-জি ও ফাইভ-জি’র ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি না।
২০০৯ সাল থেকে নেটওয়ার্ক স্থাপনে অন্তত ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বেসরকারি ফাইবার সেবাদাতারা। এখন বিনিয়োগের সুরক্ষা চান তারা।
আরও পড়ুন: নতুন সিদ্ধান্তে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকদের জন্য সুখবর!
ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী বলেন,
তারা আমার কাস্টমার। তারা বিট করে ফেললে আমার লাইসেন্স অর্থহীন হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে এই লাইসেন্স বন্ধ করে দিয়ে তাদেরকে অনুমতি দেয়া যেতে পারে!
অপারেটরদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করছে বিটিআরসি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী জানিয়েছেন, কোন বিষয়টি বেশি টেকসই, সেটি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
দেশে টেলিকম সেবার শুরুতে ফাইবার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও ২০০৯ সালে বিটিআরসি এনটিটিএন লাইসেন্স দেয়ায় তা বন্ধ হয়ে যায়।