ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. আবু বাকের মজুমদার।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি প্রতিক্রিয়া জানান।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। গতকাল (১৮ সেপ্টেম্বর) ‘ফজলুল হক মুসলিম হল স্পোর্টস টুর্নামেন্ট’-এর ফুটবল টুর্নামেন্ট চলছিল। আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমি ঢাকা মেডিকেল মোড় থেকে হল-এ খেলা দেখতে আসি এবং খেলার উদ্বোধনী ম্যাচের একাংশ ও দ্বিতীয় ম্যাচের একাংশের ধারাভাষ্যকার হিসেবে ছিলাম। ৭টা ৪০ মিনিটে হলের বাইরে আমার আরেকটা শিডিউল থাকায় খেলার কমেন্ট্রি বক্স থেকে উঠে (আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে) মেহেদী হাসানের (খেলার আয়োজকদের একজন) সঙ্গে কথা বলা অবস্থায় দেখি একজনকে (চোর সন্দেহে) হলের মেইন বিল্ডিংয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, উপস্থিত শিক্ষার্থী একজনকে (খেয়াল নাই) জিজ্ঞেস করায় বলে লোকটা মোবাইল চোর, দুপুরে ৬টা মোবাইল চুরি করেছে। নরমালি হলে অনেক এ রকম লোককে আগেও ধরতে দেখেছি। সাধারণত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রক্টর অফিসের মাধ্যমে পুলিশে হস্তান্তর করে।’
তিনি লেখেন, ‘আমার যেহেতু একটা শিডিউল আগে থেকেই ছিল তাই জুনিয়রকে বাইকের চাবি দিতে বলি, সে নিজে আমাকে দিয়ে আসার কথা বললে প্রায় একই সময়ে তাকে নিয়ে আমি আমার গন্তব্যে যাই। মোটামুটি ২-৩ মিনিটের মধ্যেই আমি হল ছেড়ে কাজে যাই। পরবর্তীতে হলে ফিরতে ফিরতে বাজে প্রায় ১২টা ১৫ মিনিট। হলে ফেরার বেশ কিছুক্ষণ পর (সময় এক্সাক্ট মনে নেই) দুইজন জুনিয়র (চেহারা চিনলেও নাম জানি না) এসে চোর সন্দেহে আটক করা লোকটা মারা যায় বলে জানায় এবং তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ডিইউ নিউজ নামে একটা অনলাইন পোর্টালে এ সংক্রান্ত নিউজ দেখে পুরোপুরি নিশ্চিত হই। সঙ্গে সঙ্গেই সম্ভাব্য জড়িত কারা এ বিষয়ে তথ্য নেয়া শুরু করি এবং ফেসবুকে প্রতিবাদ জানাই। পরবর্তীতে একজন এসে জানায় কে যেন হলের মুক্ত মঞ্চে সবাইকে ডেকেছে। মুক্ত মঞ্চে না গিয়েই আমারা উপস্থিত কয়েকজন আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেই বিক্ষোভ মিছিলের।’
ঢাবিতে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
শুরুতেই হলের এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ের সামনে আমরা স্লোগান দেয়া শুরু করি, বেশ কিছুক্ষণ এখানে স্লোগান দিয়ে ছাত্রদের নিচে নামিয়ে পরবর্তীতে মেইন বিল্ডিংয়ে মিছিল নিয়ে যাই ও ভেতরে প্রদক্ষিণ করি। পরে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল হয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে টিএসসি, ভিসি চত্বর ঘুরে আবারও টিএসসি এসে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে প্রোগ্রাম শেষ করি। প্রোগ্রাম শেষে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে যাই, সেখানে প্রক্টর স্যার আসেন। ঢাকা মেডিকেল থেকে হলে এসে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছি এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে যাচ্ছি।
এর আগে, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে আটক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা। ওই ব্যক্তিকে কয়েক দফায় মারধরের পর রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের নাম তোফাজ্জল (৩০)। তার বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলি ইউনিয়নে। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে