বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতা থেকে উৎখাত হলেন বজ্রকঠিন হাতে দেশ চালানো শেখ হাসিনা। এমনকি দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান তিনি।
ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে এবার গাজিয়াবাদ থেকে সরিয়ে নিয়েছে ভারত। তাকে গভীর রাতে হেলিকপ্টারে দিল্লির কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়। তবে স্থানটি কোথায়, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দিল্লির বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন।
শেখ হাসিনা ভারতে এসে নামার পর প্রথম রাতটি ছিলেন দিল্লির উপকণ্ঠে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটির ভিভিআইপি লাউঞ্জে। হিন্ডন মূলত একটি সামরিক বিমানঘাঁটি, তাই সেখানে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের থাকারও সুব্যবস্থা আছে। সেখানে প্রথম রাতটি কাটানোর পর তাকে গাজিয়াবাদেই (যা উত্তর প্রদেশ রাজ্যে পড়ছে) আধা সামরিক বাহিনীর একটি সেফ হাউস বা অতিথি নিবাসে সরিয়ে আনা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
তবে এখন তাকে সেখান থেকেও সরিয়ে নিয়ে এসে গভীর রাতের অন্ধকারে রাজধানী দিল্লিরই কোনো গোপন ঠিকানায় ‘মুভ’ করানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে শেখ হাসিনা (ও সঙ্গে বোন শেখ রেহানা) এখন আর উত্তর প্রদেশে না, রয়েছেন দিল্লিতেই। আর এই ‘মুভ’টা কোনো গাড়িবহরে নয়, করানো হয়েছে আকাশপথে, হেলিকপ্টারে চাপিয়ে। তাহলে ভারত তাকে কোথায় সরিয়ে নিল, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
১০-১২ দিন আগে একদিন দক্ষিণ দিল্লির বাসিন্দারা মধ্য রাতেরও অনেক পরে তাদের মাথার ওপরে আকাশে হেলিকপ্টারের মুভমেন্ট দেখে অবাকই হয়ে গিয়েছিলেন। অত রাতে দিল্লির আকাশে হেলিকপ্টারের চলাচল কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু পূর্ব ও দক্ষিণ দিল্লির একাধিক জায়গা থেকে শহরবাসী কেউ কেউ এই দৃশ্য দেখেছেন, অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিও পোস্ট করেছেন।
পরে অন্যান্য ঘটনা পরম্পরার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে বিশেষজ্ঞরা মোটামুটি নিশ্চিত ধারণা করছেন, সে দিন ওই হেলিকপ্টারে করেই শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে দিল্লিতে নিয়ে আসা হয়েছিল। দিল্লির ভেতরে সামরিক বাহিনীর অনেকগুলো হেলিপ্যাড রয়েছে, তার কোনোটাতেই সেটা নামে এবং তারপর সেখান থেকে গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় কাছাকাছি কোনো গোপন ঠিকানায়।
দিল্লিতে শেখ হাসিনার অবস্থান দীর্ঘায়িত হতে পারে, সেই সম্ভাবনা যেমন জোরালো হচ্ছে, পাশাপাশি ভারতের তরফে তৃতীয় কোনো ‘বন্ধু’ দেশে তাকে পাঠানোর চেষ্টাও কিন্তু মোটেই থেমে নেই।
এখন পর্যন্ত ভারত সরকারের ঘোষিত অবস্থান হলো, শেখ হাসিনা ভারতে এসেছেন ‘সাময়িকভাবে’। অর্থাৎ ভারত তার চূড়ান্ত গন্তব্য নয়, অন্য কোনো দেশে যাওয়ার পথে তিনি ভারতে থেমেছেন- এটাই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লির বক্তব্য।
তবে তিনি কত দিন ভারতে থাকতে পারেন, সে ব্যাপারে ভারত সরকার এখন অবধি কিছুই বলেনি। পাশাপাশি তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হবে কিংবা হবে না, সে ব্যাপারেও একটি শব্দও খরচ করা হয়নি।